রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, আগামী ৫০ বছরের কথা বিবেচনা করে পরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলাসহ নগরায়নের কাজ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য নিরাপদ শহর গড়ে তুলতে হবে। ভবিষ্যতে কোন আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার সময় খেলার মাঠ, উন্মুক্ত জায়গা রাখতে হতে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে গুরুত্বপূণ ভুমিকা পালন করতে হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে নগর ভবনের সিটি হলরুমে নিরাপদ ভবনের জন্য বিল্ডিং কোড ও আমাদের করনীয় শীর্ষক সেমিনাওে এসব কথা বলেন মেয়র। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় রাজশাহী রিয়েল এস্টেট এন্ড ডেভেলপার্স এসোসিয়েশন এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী ইতোমধ্যে দেশের বসবাসযোগ্য সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশের নগরী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটির সুনামছড়িয়ে পড়েছে। নগরীতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বহুতল ভবন নির্মাণে পার্কিং, ফায়ার সেফটিসহ বিল্ডিং কোড মেনে এ সকল বিল্ডিং নির্মাণে আরডিএকে প্রয়োজনীয় আইন প্রয়োগের নির্দেশনা প্রদান করেন মেয়র।
মেয়র আরো বলেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে রাজশাহীর সিটি সেন্টার চালু হতে যাচ্ছে। সোনাদিঘিকে আকর্ষনীয় গ্রিন জোনে পরিণত করা হবে। আরডিএ মার্কেটকে আধুনিক সুযোগসুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ শপিং কমপ্লেক্সে রূপ দিতে একটি বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ এবং শহরের যানজট নিরসনে আলিফ লাম মিম ভাটা মোড় হতে মোল্লাপাড়া পর্যন্ত পৃথক সড়ক নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণে আরডিএ চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানান মেয়র। এছাড়াও শিরোইল বাস টার্মিনাল স্থানান্তর করে সেখানে তারকা মানের হোটেল নির্মাণের প্রস্তাব দেন মেয়র।
তিনি বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার পাশাপাশি রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাথে কাজ করছে রিডা। নগরীতে প্রায় ১২শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করছে রিডা যার সাথে বিপুল সংখ্যক লোক নিয়োজিত রয়েছে। যার ফলে নগরীতে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান মেয়র। স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে পৃথক আবাসন পল্লী নির্মাণে রিডা কর্তৃপকে আহবান জানান তিনি। বহুতল ভবন নির্মাণে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও আরডিএ আইন মেনে চলতে অনুরোধ জানানো হয়।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোঃ আনওয়ার হোসেন বলেন, নিরাপদ ভবন সকলের জন্য প্রয়োজন। ভবন নিরাপদ না হলে সেখানে জীবনহানি অথবা অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে। এজন্য বিল্ডিং কোড মেনে সকল ভবন নির্মাণ করতে হবে। একইসাথে দুর্যোগ সহনীয় ভবন নির্মাণ করতে হবে। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে।
সেমিনারের আলোচক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পরিকল্পিত নগরায়নে আরডিএ ২০০৪ সালে নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কাজ শুরু করেছে। নতুনভাবে এ মাস্টারপ্ল্যানের আপডেট কাজ এগিয়ে চলেছে। বসবাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন, মুক্তবায়ুর এ নগরীকে উন্নত নগরীতে পরিণত করতে অনুমোদিত নক্সা অনুযায়ী আবাসন নির্মাণ কাজ করতে অনুরোধ জানান তিনি। স্বাধীনতা উত্তর এ দেশে বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দূর্যোগের ন্যায় প্রাণঘাতি বিভিন্ন দূর্ঘটনা ঘটেছে যা জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। সাভার ট্যাজেডি, নিমতলীর ঘটনা, বেগুনবাড়ি, নারায়নগঞ্জের ঘটনা জাতিকে স্মরণ করে দেয় আর এসবই হয়েছে অনুমোদনহীন নক্সা ও বিল্ডিং কোড না মানার কারণে। বিল্ডিং এ ফায়ার সেফটি, ভূমিকম্প সহনীয়, প্রাকৃতিক দূর্যোগ সহনীয় বিভিন্ন বিষয়ে বিবেচনা করতে সংশিস্নষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখার আহবান জানান তিনি। ডেভেলপার্সদের ভবন নির্মাণে করণীয় বিষয়ে প্ল্যান অনুযায়ী ভবন নির্মাণ, ভবনটি নিজের মনে করা এবং ভবন নির্মাণে ফাকি না দেওয়ার প্রবণতার কথা বলেন।
রিডার সভাপতি তৌফিকুর রহমান লাভলুর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সরিফুল ইসলাম বাবু, রাজশাহী চেম্বারের সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান, রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাওগাতুল আলম, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রিডার সাধারণ সম্পাদক আ স ম মিজানুর রহমান কাজী। সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন রাসিকের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ নিযাম উল আযীম, ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুজ্জামান। সেমিনারে রিডার পক্ষ থেকে মাননীয় মেয়র ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সেমিনারে রাসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ, আরডিএ ও রাসিকের কর্মকর্তা ছাড়াও প্রিন্ট ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।