রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের ৫৪৭ কোটি ১৮ লাখ ১২ হাজার ২৭৪ দশমিক ৬৬ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। রোবাবর দুপুরে নগরভবনের সিটি হলরুমে সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের বিস্তারিত তুলে ধরেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এবং অর্থ ও স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। সংবাদ সম্মেলনে নগরীর উন্নয়নে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন মেয়র।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত অর্থ বছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫২ কোটি ৩৭ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়িয়েছে ৩২৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে বাজেট বক্তব্যে মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এবারের বাজেট সুনির্দিষ্ট ৮ টি কর্মকৌশল সামনে রেখে প্রস্তাবিত বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১. পরিকল্পিত নগর অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধার উন্নয়ন। ২. উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসন এবং সবুজায়ন, পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ এর মাধ্যমে মহানগরীর পরিবেশ উন্নয়ন। ৩. নগরের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। ৪. প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ব্যবস্থাপনা ও কর্মক্ষমতার উন্নয়ন । ৫. রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকরণের মাধ্যমে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি। ৬. কর্ম সম্পাদনে গতিশীলতা আনয়ন ও সেবার মান বৃদ্ধি। ৭. দাপ্তরিক কর্মকান্ড স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। ৮. আর্থিক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা যে প্রতিশ্রুতি মহানগরবাসীকে দিয়েছিলাম, একটি গণমুখী বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে তার বাসত্মব রুপ দিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। সে নিরিখেই ২০১৯-২০ বছরের বাজেটটি প্রসত্মত করা হয়েছে। একই সাথে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের আয়-ব্যয়ের প্রকৃত অবস্থার উপর ভিত্তি করে উক্ত অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটও প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনারা আমার উপর যে আস্থা রেখেছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে উন্নয়ের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এবারেও উন্নয়ন কাজ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। রাজশাহীকে মেগাসিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণসহ মাস্টারপস্নান তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের নিকট প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প প্রসত্মাব প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া, চীন, ভারত, কানাডা, নরওয়ে এবং ইন্দোনেশিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় রাজশাহীর যোগাযোগ ব্যবস্থা, নদী খনন, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নগরায়ন, কৃষিজ এবং ফলজ দ্রব্যাদি প্রক্রিয়াজাতকরণ ইত্যাদি উন্নয়ন সাধন করা হবে। এসব ক্ষেত্রে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন করা সম্ভবপর হবে বলে আশা করছি। নগরবাসীর নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে এ সংস্থাকে চালিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্য আমি বাংলার গণমানুষের নেত্রী জাতির বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নগরবাসীদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
রাজশাহীর উন্নয়নে মহাপরিকল্পনার বিষয়টি উল্লেখ করে মেয়র বলেন, মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে রাজশাহীর বিভিন্নখাতে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও চায়নার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পাওয়ার চায়না‘র মধ্যে গত ১২ মে ২০১৯ তারিখে সমঝোতা স্মারক চুক্তি (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যানটি বাসত্মবায়ন হতে শুরু করলে পাল্টে যাবে পুরো রাজশাহী মহানগরীর চিত্র। চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন বছর ৮ টি খাতকে সামনে রেখে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে পাওয়ার চায়না। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে পাওয়ার চায়না। খাতগুলো হলো, পদ্মা নদী শাসন করে নগরীর তীর সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তোলা হবে স্যাটেলাইট টাউন, হোটেল, মোটেল, বিনোদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বিশ্বমানের বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, ইকোপার্ক তৈরি। সায়েন্সসিটি তৈরি। হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন এবং টেকনিক্যাল সুবিধা বাড়ানো। সুয়ারেজ ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। নগর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন। এর মধ্যে রয়েছে গণপরিবহণ, রাসত্মা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল ও ফ্লাইওভার। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন মেয়র। চলমান প্রকল্পগুলে হচ্ছে, ১৮২ কোটি ৬৮ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর রাজশাহী-নওগাঁ প্রধান সড়ক হতে মোহনপুর-রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ১৮২ কোটি ২২ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণার্থে নর্দমা নির্মাণ (৩য় পর্যায়)(১ম সংশোধিত) প্রকল্প, ১২৭ কোটি ৪৯ লক্ষ ৫৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল হতে তালাইমারী পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্প, ১৭২ কোটি ৯৮ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার উন্নয়ন প্রকল্প, ২১ কোটি ৯৫ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ এবং প্রত্নতত্ত্ব অবকাঠামোর উন্নতি সাধন ও সংরক্ষণের মাধ্যমে রাজশাহী মহানগরীর টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প, ১০৮ কোটি ২৭ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় হতে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় হতে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশসত্মকরণ ও উন্নয়ন (২য় সংশোধিত) প্রকল্প।
সংবাদ সম্মেলনে সিটি কর্পোরেশন গৃহীত বিভিন্ন নতুন প্রকল্প সর্ম্পকিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। নতুন প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ভৌত অবকাঠামোসমূহের সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে রাজশাহীকে বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করা এবং নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির উদ্দেশে প্রণীত ২৯৭৩ কোটি ৩৯ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৮৯৫ কোটি ৩৯ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর সড়ক বাতি ও ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আধুনিকায়ন প্রকল্প, ৪৯ কোটি ৮৬ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক ও নর্দমা সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প, ৭৯৫ কোটি ৮০ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর প্রাকৃতিক জলাশয় সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প তুলে ধরা হয়। এসব প্রকল্প ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের মধ্যে অনুমোদন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।
মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ২৯৯৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি সড়কে নির্বিঘ্নে যান চলাচলের উদ্দেশ্যে ১২.৫০ মিটার চওড়া করে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি বর্তমানে প্রণয়নাধীন পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত ডিপিপি প্রণয়নপূর্বক সরকারের অনুমোদনের নিমিত্ত দাখিল করা হবে। ৪৯২ কোটি ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীতে নতুন ৫০.০০ একর ভূমি বরাদ্দের মাধ্যমে আধুনিক স্যানিটারী ল্যান্ডফিল্ড নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বর্তমান ল্যান্ডফিল্ড ভরাট হয়ে যাওয়ায় নতুনভাবে ল্যান্ডফিল্ড নির্মাণের প্রয়োজন। প্রস্তাবিত ল্যান্ডফিল্ডে হাসপাতাল বর্জ্য পুড়িয়ে বিনষ্ট করণে আধুনিক ইন্সিনারেশন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নাধীন রয়েছে। দ্রুত ডিপিপি সরকারের অনুমোদনের নিমিত্ত দাখিল করা হবে। ৪২৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীর শ্রীরামপুর পদ্মা নদীর তীরে প্রায় ১০০.০০ একর ভূমি বরাদ্দের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত পার্কে আধুনিক বিনোদন ব্যবস্থা, রাত্রী যাপনের জন্য কটেজ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নাধীন পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত ডিপিপি সরকারের অনুমোদনের নিমিত্ত দাখিল করা হবে। ৫১১ কোটি ৯ লক্ষ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে মহানগরীতে প্রায় ১০০.০০ একর ভূমি বরাদ্দের মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে শেখ রাসেল সায়েন্স সিটি ও সাফারি পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত পার্কে শিশুদের শিক্ষামূলক বিনোদন কাঠামো ও বিভিন্ন পশুপাখির সমন্বয়ে সাফারি পার্ক এবং রাত্রী যাপনের জন্য কটেজ ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নাধীন পর্যায়ে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক নৌবন্দর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মেয়র বলেন, রাজশাহী শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী এ মহানগীর উন্নয়ন ও বিকাশের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এ নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা তথা নদী সচল রাখার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র একান্ত ইচ্ছায় পদ্মা নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং এর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ ড্রেজিং কাজ শেষ হলে ভারতের সাথে আমদানি- রপ্তানির নতুন করিডোর হবে পদ্মা নদী। ড্রেজিং পরবর্তী এখানে আন্তর্জাতিক নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা হলে নৌপথে বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের মাধ্যমে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত হতে মালামাল অনেক কম খরচে পরিবহন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও মালামালগুলি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায় অনেক কম খরচে পৌছানো যাবে। নদীবন্দর প্রতিষ্ঠার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে এবং বেকার সমস্যারও সমাধান হবে। এতে করে রাজশাহীতে বিনিয়োগের এক নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে।
শিল্পায়নের ব্যাপারে মেয়র বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, বিসিক-২, বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক। এই তিনটি শিল্পাঞ্চলে প্রকৃত উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া শতাধিক গার্মেন্টস, শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লক্ষাধিক ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
যানজট নিরসনের উদ্যোগের ব্যাপারে মেয়র বলেন, রাজশাহী মহানগরীর যানজট নিরসনে ব্যাটারি অটোরিকশা ও চার্জার রিকশা চলাচলে নীতিমালা প্রণয়ণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী সকাল ও বিকেল দুই শিফটে চলাচল করবে অটোরিকশা। অটোরিকশাকে মেরুন ও পিত্তি রঙে চিহ্নিতকরণ ও চলাচলের জন্য টাইম টেবিল নির্ধারণ করা হয়েছে। ১০ হাজার অটোরিকশা এবং ৫ হাজার চার্জার রিকশার বেশি নিবন্ধন যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে একমুখী যান চলাচল ও পথচারী সড়ক চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে নগরীর যানজট নিরসন হবে।
এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালীকরণ, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, মহানগরীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ পিপিপি এর ভিত্তিতে বেসরকারি উদ্যোগী সংস্থার মাধ্যমে নির্মাণধীন বাণিজ্যিক ভবনের কাজ সমাপ্ত, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার উন্নয়ন, বিকেএসপি প্রতিষ্ঠ, দরিদ্র ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানার উন্নয়ন , সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম সম্প্রসারণ, চারটি আধুনিক কসাইখানা (শ্লটার হাউজ) নির্মাণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
নগরীকে সবুজায়নের ব্যাপারে মেয়র বলেন, রাজশাহী মহানগরীকে উন্নত-বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে ও পরিবেশদূষণরোধে সবুজায়নের লক্ষ্যে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গত ২০জুন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন করা হয়। এ বছর নগরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার গাছের চারা বিতরণ করা হবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক আরো ১৫ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হবে। পরবর্তী বছরগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে মেয়র বলেন, বর্জ্য আবর্জনা হতে রিসাইকেলের মাধ্যমে সার, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপন্নের জন্য আমেরিকান একটি কোম্পানী এলএসসি ও রাসিকের সাথে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করি চলতি বছরে ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। নাগরিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে আনতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সকল ক্লিনিকের আউট হাউজ মেডিকেল বর্জ্য পরিবেশসম্মত ও সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ও প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রিজম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব কর্মচারীরা মেডিকেল ও ক্লিনিক থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে, তাদের ভ্যানে করে প্ল্যান্টে নিয়ে গিয়ে সেখানে পরিশোধন ও অপসারণ করবে।
এই কার্যক্রম চালু হলে মেডিকেল বর্জ্য পৃথকভাবে সংগ্রহ এবং ট্রিটমেন্টের কার্যক্রম চালু হবে। এই প্রজেক্টে অত্যাধুনিক অটোক্লেভ এবং ইন্সিনারেশন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। আপনাদের অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে, সুষ্ঠু আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে ০২ টি স্কীড লোডার, ০১ টি চেইন ড্রোজার ও ০১ টি এক্সাভেটর সংযোজন করা হয়েছে। আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে আরো ০৪ টি স্কীড লোডার, ০২ টি চেইন ড্রোজার ও ০২ টি এক্সাভেটর সংযোজন করা হবে। বাড়ি বাড়ি আবর্জনা সংগ্রহের জন্য আমরা ব্র্যাকের সহযোগিতায় আরো ১৯০ টি রিকশ গারবেজ ভ্যান সংযোজন করা হয়েছে ওয়ার্ড এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। পরিচ্ছন্নকর্মী ও এই কাজে নিয়োজিত সকল মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের চিহ্নিত করার জন্য পোশাক সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। একই সাথে অত্যমত্ম ঝুকিপূর্ণ এ কাজে নিয়োজিত কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিহ্রাসের জন্য গামবুট, হান্ডগেস্নাভস, নোজমাক্স, রেইনকোর্ট ইত্যাদি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা শাওগাতুল আলমের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র-১ ও ১২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু, প্যানেল মেয়র-২ ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জনাব আলী, প্যানেল মেয়র-৩ তাহেরা খাতুন মিলি, অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ সরকার, অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আযিম, অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান, অর্থ ও সংস্থাপন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য সকল কাউন্সিলরবৃন্দ, সচিব রেজাউল করিম, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহানা আকতার জাহান, প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ.এ.এম আঞ্জুমান আরা, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন, মাননীয় মেয়র মহোদরের একান্ত সচিব আলমগীর কবির , নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল, বাজেট কাম হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম খান, হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা নিজামুল হোদাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রমুখ।
এরআগে সকালে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট বিষয়ে বিশেষ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনা ও অনুমোদন হয়।