জলাতঙ্ক রোগ নিমূর্লের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীতে ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্তে নগরভবনে এক অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে নগর ভবন সভা কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ সরিফুল ইসলাম বাবু।
নগরীতে আগামী ১০ হতে ১৪ ফেব্রম্নয়ারি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইন পালন করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে দেশ থেকে জলাতঙ্ক রোগ নিমূর্লের লক্ষ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মহানগরীতে ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান (এমডিভি) কার্যক্রম বাসত্মবায়নের নিমিত্তে ইতোমধ্যে এনিমেল মাইক্রোপস্ন্যানিং করা হয়েছে। জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাকার কমিউনিবেল ডিজিজ কন্ট্রোল অপারেশন প্লানের জলাতঙ্ক রোগ নির্মূল কর্মসুচীর আওতায় দেশের সকল জেলায় পর্যায়ক্রমে ৩ রাউন্ড এমডিভি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। উক্ত কার্যক্রমের আওতায় সারাদেশে ইতোমধ্যে প্রায় ৮ লাখ ১৫ হাজারের কুকুরকে জলাতঙ্কের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে এমডিভি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম। সভায় জলাতঙ্কের ভয়াবহতা ও এর প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা জেনেটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাঃ উম্মে রুমান সিদ্দীকি।
সভায় আরও জানানো হয়, জলাতঙ্ক একটি ভয়ংকর মরণব্যাধি, এ রোগে মৃত্যুর হার শতভাগ। পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও প্রতি ১০ (দশ) মিনিটে একজন এবং প্রতি বছরে প্রায় ৫৫ হাজার মানুষ জলাতঙ্ক রোগে মারা যায়। জলাতঙ্ক রোগটি মূলত কুকুরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও বিড়াল, শিয়াল, বেজী, বানরের কামড় বা আচঁড়ের মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২ থেকে ৩ লক্ষ মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়ালের কামড় বা আচঁড়ের শিকার হয়ে থাকে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। এ ছাড়াও প্রায় ২৫ হাজার গবাদি প্রাণী এ রোগের শিকার হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত এবং গবাদি প্রাণীর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান অজানা হলেও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবাদি প্রাণী এ রোগে মারা যায়। ২০২২ইং সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্ক মুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ইং সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সকল জেলার মোট ৬৬টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। ঢাকা জেলার মহাখালীতে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল এ প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ কুকুরের কামড়ে আক্রামত্ম রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। বিনামূল্যে রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণের টিকা প্রদান করা হয়।
এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে ২০১১ইং সাল থেকে সারাদেশে ব্যাপক হারে কুকুরের টিকাদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এসকল কার্যক্রমের পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম ও দিবস উদযাপনের মাধ্যমে অবহিতকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়াও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, বিভিন্ন আমত্মর্জাতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন এনজিও-এর সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে একসাথে কাজ করে যাচ্ছে।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রাসিকের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র ও ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ নিযাম উল আযীম, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ শাহাদত হোসেন শাহু, ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বেলাল আহমেদ, ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আবদুস সোবহান, ডাঃ জালাল উদ্দিন, ডাঃ সোহরাব হোসেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাসিকের প্যানেল মেয়র-২ ও ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ রজব আলী, প্যানেল মেয়র-৩ ও ১নং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর মোসাঃ তাহেরা খাতুন, জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের অফিসার জুলফিকার মোঃ আকতার হোসেন, রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডাঃ সঞ্জিত কুমার সাহা, রাজশাহীর বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডাঃ গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও লাইন ডাইরেক্টর, সিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ডাঃ সানিয়া তহমিনা, রাসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব মোঃ রেজাউল করিম। সভায় রাসিকের কাউন্সিলরবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।